মামুন আহমেদ:
বগুড়ার নন্দীগ্রামে আধুনিকতার ছোঁয়ায় ও কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী বাহন ঘোড়ার গাড়ি যা টমটম গাড়ি নামে পরিচিত। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিপাকে পড়েছে ওই ঐতিহ্যবাহী বাহন(ঘোড়ার গাড়ি) ব্যবসায়ীরা। এক সময় নন্দীগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন মাঠে-ঘাটে দেখা যেতো এই বাহন ৷
এক সময় এই অঞ্চলের মানুষদের সৌখিনতার বাহন ছিলো ওই ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার গাড়ি( টমটম)৷ ছোট,বড়, কিশোর, কিশোরী , বৃদ্ধ সকলে শখ করে গাড়িতে উঠতো ৷ কিন্তু আধুনিকতার ছোয়ায় যন্ত্র চালিত বাহন থাকায় হারিয়ে যেতে বসেছে সৌখিনতার এই বাহন। এক সময় এর জনপ্রিয় গান, ওকি গাড়িয়াল ভাই-কত রব আমি পন্থের দিকে চাইয়ারে’ মাঠে ঘাটে পথে প্রান্তরে এমন প্রায়ই শোনা যেত।
কিন্তু কালের বিবর্তনে ঘোড়ার গাড়ি( টমটম) হারিয়ে যাওয়ায় গাড়িয়ালদের সেই গান আর শোনা যায় না। কথাটি গানের লাইন হলেও এক সময় তা নন্দীগ্রামে বাস্তব ছিলো। এখন নন্দীগ্রামের বিভিন্ন ইউনিয়নে গেলেও এমন ঘোড়ার গাড়ি আর চোখে পড়ে না। মানুষ এক সময় যা কল্পনা করেনি তাই এখন পাচ্ছে হাতের কাছেই। ইট-পাথরের মত মানুষও হয়ে পড়ছে যান্ত্রিক। মানুষ তার নিজস্ব ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে। তারই ধারাবাহিকতায় নন্দীগ্রামে এক সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয় গ্রাম-বাংলা ও বাঙালিদের ঐতিহ্য এবং যোগাযোগ ও মালামাল বহনের প্রধান বাহন ছিল ঘোড়ার গাড়ি। কালের বিবর্তনে তা এখন হারিয়ে যাবার পথে।
নন্দীগ্রাম উপজেলার ১নং বুড়ইল ইউনিয়নে মাঝে মধ্যে দেখা মিলে ঘোড়ার গাড়ি। তাই হঠাৎ করেই নন্দীগ্রাম শেরপুর রোডের ১নং বুড়ইল ইউনিয়নের রিধইল গ্রামে রাস্তার উপর দেখা মেলে একটি ঘোড়ার গাড়ি। কথা হয় দোহার গ্রামের ঘোড়ার গাড়ি চালক শ্রী জগদেবের সাথে। তিনি জানান, এক সময় আমার বাপ দাদারা এই ঘোড়ার গাড়ি করে কৃষি পণ্য বহন করতো। তাদের ঐতিহ্য ছিল ঘোড়ার গাড়ি। কিন্ত আধুনিকতার ছোঁয়ায় ও কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে ঘোড়ার গাড়ি। পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য যেন হারিয়ে না যায় তাই এখনো ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে বিভিন্ন মালামাল পরিবহন করে ঐতিহ্যকে ধরে রাখার চেষ্টা করছি।
শ্রী জগদেব আরও বলেন, এক সময়
বিয়ে এবং অন্য কোন উৎসবে এই ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার হত। ঘোড়ার গাড়ী ছাড়া সামাজিক অনুষ্ঠান চিন্তায় করা যেত না। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় এই যুগে হারিয়ে যাচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি। হাতে গোনা দু-একটা গাড়ি দেখা যায় দু-একটা গ্রামে তাও জরাজীর্ন অবস্থা। তাছাড়া যেন চোঁখেই পড়ে না এই গাড়ি গুলো।
শ্রী জগদেবের সাথে কথা বলে আরো জানা যায়,২০-২৫ বছর আগে অনেকেরি এই গাড়ি গুলো ছিল উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন। ঘোড়ার গাড়ি দুই চাকাবিশিষ্ট এক প্রকার বিশেষ যান। এ যানে সাধারণত একটি মাত্র অক্ষের সাথে চাকা দুটি যুক্ত থাকে। সাধারণত চালক বসেন গাড়ির সামনের দিকে। আর পেছনে বসেন যাত্রীরা। বিভিন্ন মালপত্র বহন করা হয় গাড়ির পেছন দিকে। বিভিন্ন কৃষিজাত দ্রব্য ও ফসল বহনের কাজে গরুর গাড়ির প্রচলন ছিল ব্যাপক। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ঘোড়ার সাহায্যে চলমান ঘোড়ার গাড়ি বহুবিধ কারণে বর্তমানে হারিয়ে যেতে বসেছে । দিন আর সময় বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে এখন এসব গাড়ি স্থান পেয়েছে সংবাদপত্র ও বিভিন্ন বইয়ের পাতায়। তবে নন্দীগ্রাম উপজেলার কিছু কিছু জায়গায় এখনোও দেখা মেলে গরু ও মহিষ আর ঘোড়ার গাড়ি। এসব গাড়ি যারা চালান তাদের বলা হয় গাড়িয়াল। তবে পেশাদার গাড়িয়াল খুঁজে পাওয়া এখন দুষ্কর।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন দেখতাম আমার বাপ-দাদারা এই ঘোড়ার গাড়ি করে ধান নিয়ে হাটে যেত। সে সময়ের ঐতিহ্য ছিল ঘোড়ার গাড়ি যা এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে।