বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বসনবুড়ি মেলা বিলীন হওয়ার পথে। ২শতাধিক বছরের পুরনো এই মেলা এক সময় হিন্দুদের মিলন মেলা থাকলেও, কালের বিবর্তণে হারিয়ে গেছে হিন্দুরা। চোপিনগর ইউনিয়নের বড়পাথার গ্রামে বহু বছর ধরে ওই মেলা চালিয়ে আসছিলেন ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা।
মেলায় আর পূজা না হলেও দেড় শতাধিক মহিষ ও গরু জবাই হতো। সাথে থাকতো বিভিন্ন রকমের মিষ্টি, খেলনা আর গ্রামীন বিনোদন। বসনবুড়ি মেলা স্থানীয়দের কাছে মেলার পরিচিত হয়ে উঠেছিলো মহিষের মেলা বলে।
রোববার(২০জুলাই) এই মেলা হওয়ার কথা ছিলো। তবে ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর রহমান উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে একটি অভিযোগ করেছিলেন। এতে মেলার অনুমতি দেয়নি উপজেলা প্রশাসন।
মেলার পাশের বাসিন্দা এবং ওই ইউনিয়নের অনেকেই বলছেন, যেদিন মেলা হয়, ঠিক একই দিনে কামারপাড়া হাট হয়। মেলাটি অন্যত্র সরিয়ে নিতেই মূলত এই অভিযোগ করা হয়েছে। এই এলাকায় এখন আর কোন হিন্দু নাই। মেলায় পূজাও হয়না। মেলায় জবাই করে বিক্রি হওয়া গরু, মহিষের মাংস হিন্দুরা খায় না। মূলত কিছু ব্যক্তি মেলাটি সরিয়ে কামারপাড়া হাটে নিতেই এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এদিকে সরেজমিনে কামারপাড়া হাটে গিয়ে দেখা গেছে মেলার প্রস্তুতি প্রায় শেষ। বসেছে মিষ্টির দোকান, শিশুদের বিনোদনের বিভিন্ন উপকরণ এবং জবাই করার জন্য আনা হয়েছে গরু মহিষ। অতিরিক্ত খাজনার আশংকায় রয়েছেন ওই হাটে আসা ব্যবসায়ীরা।
জানতে চাইলে অভিযোগকারি চোপিনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মোজাফ্ফর রহমান বলেন, মেলার পাশে মসজিদ, ঈদগাহ মাঠ, মাদ্রাসা সহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গত ২০বছর ধরে মেলাটি বন্ধ রয়েছে। মেলাটি হিন্দুরা করতো। এখন আর হিন্দুরা নাই। মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে তাই মেলাটি বন্ধ করতে আবেদন করেছি।
জানতে চাইলে চোপিনগর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং মেলা এলাকার পাশে সাহনগর গ্রামের বাসিন্দা এমরান বলেন, বসনবুড়ি মেলা শাজাহানপুরের ঐতিহ্য। ইতিপূর্বে ওই মেলায় দেড় শতাধিক মহিষ এবং গরু জবাই হয়েছে। হিন্দুরা না থাকায় মেলায় কোন পূজাও হয়না তাই আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের প্রশ্নই ওঠে না। বহু বছর ধরে মুসলমানরাই এই মেলা করে আসছিলো।
কামারপাড়া হাটে আসা মিষ্টি ব্যবসায়ী মেজাবুল আলম বলেন, আমরা বড়পাথার এলাকায় মেলা করতাম। এক মেলায় আমরা ১০লক্ষ টাকার বেশি মিষ্টি বিক্রি করে থাকি। যেহেতু ওই মেলা এবারে হচ্ছেনা তাই কামারপাড়া হাটেও একই রকম বিক্রির আশা করছি।
আরেক মিষ্টি ব্যবসায়ী বাবু বলেন, গত বছর ধরে মেলায় ব্যবসা করছি। রোববার হাটে প্রায় ৭লক্ষ টাকা বিক্রির আশা করছি।
অনেক ব্যবসায়ী পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, খাজনা নিয়ে আমরা আতংকে আছি। রোববার হাট হলেও শনিবার রাতেই খাজনা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। ৫হাজার টাকা থেকে ১০হাজার টাকা পর্যন্ত আমাদের খাজনার কথা বলে গেছেন হাট ইজারাদারের লোকজন।
হাট ইজারাদার এইচ এম শফিক বলেন, হাট আমার নামে ডাক হলেও ১৪ আনা শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছি। শুনেছি তাঁরা ৫হাজার টাকা থেকে ১০হাজার টাকা পর্যন্ত খাজনা নিবে। যারা শেয়ার কিনেছেন অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের চেষ্টা করছেন, এটা দুঃখজনক।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাইফুর রহমান বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার আশংকায় বসনবুড়ি মেলার অনুমতি দেয়া হয়নি। কামারপাড়া হাটের স্বাভাবিক খাজনা নিতে পারবে। তবে অতিরিক্ত খাজনা নেয়ার সুযোগ নাই। এজন্য ব্যবসায়ীদের একত্রিত থাকতে হবে। আমি শাজাহানপুর থানার ওসিকে বলে দিয়েছি। থানায় ফোন দিলেই পুলিশ যাবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীও গিয়ে ব্যবস্থা নিবে।
উল্লেখ্য, বসনবুড়ি মেলা স্থানীয়দের কাছে পরিচিত ছিল মহিষের মেলা নামে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপস্থিতি না থাকলেও মুসলমানরা বহু বছর ধরে মেলাটি চালিয়ে আসছিলেন।বর্তমানে মেলা বন্ধ হওয়ায় ঐতিহ্য হারানোর শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকেই।